img

দেশের সিরামিক খাতে মোট বিনিয়োগের আকার ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে পণ্যটি বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। এ বাবদ আয় হচ্ছে বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু বৈশ্বিক বাজারের মন্দার কারণে দেশের সম্ভাবনাময় শিল্প খাতটিকেও বর্তমানে সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। ইউরোপের অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও মার্কিন বাজারে শুল্ক প্রতিবন্ধকতাসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সিরামিক রফতানিকারকদের। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের সিরামিক পণ্যের রফতানিতে। চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সিরামিক রফতানি বাবদ বাংলাদেশের আয় কমেছে ২ দশমিক ১৩ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশ, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, তুরস্ক, তাইওয়ান ও দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ থেকে সিরামিক পণ্য রফতানি হয়। দেশের সিরামিক খাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০। এসব প্রতিষ্ঠানের উত্পাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার।

সিরামিকের আন্তর্জাতিক বাজার বিস্তৃতি প্রায় ২ হাজার কোটি ডলারের। পণ্যটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব খুবই সামান্য। তবে প্রতি বছরই তা বাড়ছিল। কিন্তু এ ধারা অব্যাহত থাকবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সিরামিক পণ্য রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ ৪ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার ডলার আয় করে। গত অর্থবছর (২০১৫-১৬) এ আয় কমে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার।

সিরামিক রফতানি পতনের এ ধারা অব্যাহত রয়েছে চলতি অর্থবছরেও। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সিরামিক পণ্য রফতানি থেকে দেশের আয় হয়েছে ২ কোটি ২৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় ছিল ২ কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এ হিসাবে চলতি অর্থবছর খাতটি থেকে রফতানি আয় কমেছে ২ দশমিক ১৩ শতাংশ।

সিরামিক রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক ওয়্যারস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিডব্লিউএমএ) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে তৈরি সিরামিক পণ্যের অর্ধেকই রফতানি হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে, যার হার যথাক্রমে ২০ ও ৩০ শতাংশ। মোট রফতানির বাকি ৫০ শতাংশ যায় অন্য দেশগুলোয়। মূল দুই বাজারের প্রতিবন্ধকতাগুলোই এ খাতে রফতানি আয়সংকোচনের সবচেয়ে বড় কারণ।

বিসিডব্লিউএমএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও মন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ইউরোপসহ সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সিরামিক খাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিপুল চাহিদা থাকলেও পণ্যের মূল্য নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। নিদের জায়গা থেকে মন্নু সিরামিক দেখছে, কয়েকটি গন্তব্যে মূল্য পরিস্থিতি ভালো। কিন্তু বেশির ভাগ গন্তব্যের ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি খারাপ। ইউরোপের অবস্থা ভালো নয়, যুক্তরাষ্ট্রেরও একই অবস্থা। ইউরোপে বেক্সিট হয়ে গেল; গ্রিস দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ধুঁকছে। ইতালির অর্থনীতি ভুগছে। ফ্রান্স মোটামুটি ভালো অবস্থানে থাকলেও পর্তুগাল ও স্পেন অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের পণ্য কেনার সক্ষমতা হারিয়েছে। এসব কারণেই রফতানি শ্লথ হয়েছে।

আগামীতে ভালো সময়ের আশা জানিয়ে মইনুল ইসলাম বলেন, ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরোধিতা বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। বিশেষ করে সিরামিক পণ্যের ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্তের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। চীনের ওপর শুল্কারোপের পরিকল্পনা করছে ইউরোপ। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হলে আমাদের জন্য বেশ সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি হবে। অভ্যন্তরীণ বাজারে গ্যাস সংকটের কারণে সিরামিক কারখানাগুলোর উত্পাদনক্ষমতার ১০ শতাংশ ব্যবহার করা যায়নি। তবে সরকারের কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক উদ্যোগগুলো সিরামিক খাতের ভবিষ্যতের জন্য ভালো।

বিসিডব্লিউএমএ সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতায় মূল্য নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রফতানিকারকদের। আর এ খাতের বাণিজ্যে বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী চীন। ক্রেতারা বলছেন, চীন থেকে পণ্য আমদানিতে খরচ অনেক কম। ফলে বাধ্য হয়ে মূল্য কমাচ্ছেন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। তাই পরিমাণগতভাবে রফতানি বাড়লেও দাম কমায় আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে ইউরোপের বাজারে শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলেই বাংলাদেশের সিরামিক পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার আরো সম্প্রসারণ হবে।

এই বিভাগের আরও খবর